রাজা শশাঙ্কের পরিচয় দাও ।

রাজা শশাঙ্ক

রাজা শশাঙ্কের পরিচয় দাও ।  অথবা, রাজা শশাঙ্ক সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

শশাঙ্কের পরিচয় : শশাঙ্ককে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে প্রথম প্রসিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ নরপতি বলা হয়। শশাঙ্কের বংশ পরিচয় বা বাল্যজীবন সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়না। প্রাচীন রহিতাশ্বরে গিরিগাত্রে একটি সীলে ‘শ্রীমহাসামন্ত শশাঙ্ক’ এর নাম খোদিত আছে। অনুমান করা হয় এই মহাসামন্ত শশাঙ্ক ও গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক একই ব্যক্তি। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে শশাঙ্ক মৌখরি রাজ্যের অধীন সামন্ত ছিলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন- তিনি গুপ্তবংশের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। তবে ড. এ.এম চৌধুরীর মতে এ সম্পর্কিত মতবাদ সম্পূর্ণ ভীত্তিহীন। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘বাঙালাদেশের ইতিহাস’ গ্রন্থে শশাঙ্ককে মহাসেন গুপ্তের পুত্র বা ভ্রাতুসপুত্র বলে মত প্রকাশ করেছেন।

সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে কোন এক সময়ে রাজা শশাঙ্ক গৌড় রাজ্যে ক্ষমতাসীন হন। তার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলায় বহরমপুরর ছয় মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত রাঙ্গমাটি। বাংলার উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাংশ শশাঙ্কের রাজ্যাধীন ছিল। এ এলাকায় পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজাদের শাসনাবসানের পরই শশাঙ্কের উদ্ভব।

সামন্তরূপে জীবন শুরু করে ৬০৬ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে শশাঙ্ক স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। গোড়ি, মগধ, উৎকল ও কঙ্গোদের উপর তিনি আধিপত্য বিস্তার করেন। ৬১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শশাঙ্ক সার্বভৌম ক্ষমতার অধীকারী ছিলেন একথা ঐবৎসরে উৎর্কীণ গণ্ডম তাম্রশাসন হতে প্রমাণিত। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দের অল্পকাল পূর্ব শশাঙ্ক যে স্বীয় রাজ্যে অধিষ্ঠিত ছিল তার প্রমাণ চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর উক্তিতে আছে। হিউয়েন সাং এর ভাষ্য মতে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দের অল্পকাল পূর্বে শশাঙ্ক গয়ার বোধিবৃক্ষ ছেদন সরিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে শশাঙ্কের সারাদেহ ক্ষতহয়, মাংস পঁচে যায় এবং অল্পকাল পরেই তার মৃর্ত্যু হয়। হিউয়েন সাং এর বক্তব্য অনুসারে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দের অল্পকাল পূর্ব পর্যন্ত শশাঙ্ক সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং অল্পকাল পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

শশাঙ্ক শৈব ছিলেন। শৈব ধর্মাবলম্বী শশাঙ্ক স্বাভাবিক ভাবেই শৈব ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার কিছুটা ব্যহৃত হতে পারে। ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে- রাজা শশাঙ্ক প্রজাদরদি ছিলেন, তিনি প্রজাদের খোঁজ খবর নিতেন এবং ভালবাসতেন।

রাজা হিসেবে শশাঙ্কের কৃতিত্ব অনেক। তিনি ছিলেন একজন শক্তিমান শাসক। তিনি বাংলার গৌরব বাড়িয়েছেন। তাই সপ্তম শতাব্দীতে বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক একটি বিশিষ্ট নাম। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলা সর্বপ্রথম উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করে। তবে একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, তিনিই প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ শাসক।

সালেক শিবলু, এমফিল গবেষক, বাংলা বিভাগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *