চাকরির প্রস্তুতিতে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার
জোনায়েদ হোসেন, সহকারী কর কমিশনার
একটা সময় আমি মনে করতাম ফেসবুক ব্যবহার করা মানে পড়াশোনার বারোটা বাজা! জিনিসটা অমূলকও ছিল না, সারাদিন টাইমলাইন স্ক্রল করলে দিনে দিনে আপনি মূর্খ হবেন এটা নিশ্চিত। শত-সহস্র আজগুবি লেখা, অশ্লীল, অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ভরা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া। তবু আমি বলবো তথ্য শেয়ার, বিনিময়, তুলনা ইত্যাদির একটা চমৎকার জায়গা এগুলো।
আমার কথাই বলি, আমি এতো এতো ভালো জিনিস পেয়েছি তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। কিছু উদাহরণ দিই-
১. একটা সময় প্রতি শুক্রবার একটা চাকরির পত্রিকা রাখতাম। ঐগুলোতে সব কাঙ্ক্ষিত চাকরির খবর পেতাম না। ফেসবুকের কিছু ডেডিকেটেড গ্রুপ আরো ভালো ও বেশি চাকরির খবর দিত। আমি ওখান থেকে সব তথ্য পেতে থাকলাম, চাকরির পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
২. বিসিএস ও ব্যাংক জব প্রস্তুতির বেশ কয়েকটা গ্রুপে জয়েন করলাম। চমৎকার চমৎকার গাইডলাইন, আপডেট পেতে থাকলাম সেগুলোতে। আমি নিজেও লিখতাম। কোন লেখা, নোট, গাইডলাইন গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে নিজের টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে রেখে দিতাম। পরবর্তীতে প্রয়োজনের সময় সহজেই খুঁজে পেতাম।
আবার নিজের পড়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেলেও পোস্ট আকারে গ্রুপ গুলোতে দিতাম। পরবর্তীতে নিজের নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে ওখান থেকে দেখতে পারতাম। সব বইতো সবসময় সাথে থাকতো না।
৩. কোন টপিক না বুঝলে প্রায়ই গ্রুপগুলোতে জানতে চাইতাম। এরপর সুন্দর সুন্দর ব্যাখ্যাসহ আলোচনা হতো এগুলো নিয়ে। বুঝার পাশাপাশি এগুলো আর ভুলতাম না।
৪. কোন কনফিউজড প্রশ্ন থাকলেও একইভাবে আলোচনা করে নিতাম।
৫. আরেকটা মজার বিষয় ছিল আমার জন্য। চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই আমি মূলত ঢাকা শহরে আসি। কিছুই চিনতাম না ঢাকার। চাকরির পরীক্ষাগুলোর সেন্টার পরতো বেশিরভাগ আজিমপুর, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকার দিকে। আমি থাকতাম আশকোনা (উত্তরার পাশে)। তো যখনই কোন লোকেশন অপরিচিত লাগতো, গ্রুপে পোস্ট দিয়ে জানতে চাইতাম, ওখানে কীভাবে যাবো? সুন্দর গাইডলাইন পেয়ে যেতাম।
৬. পার্সোনালি আমি কোন ক্যাডার অফিসারকে চিনতাম না। কখনো কথা বলার সুযোগও হয়নি। (উচ্চ মাধ্যমিক এর শিক্ষকদের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক এ থাকতে যতটুকু হয়েছে)। ফেসবুকে অনেক ক্যাডার অফিসারের লেখা, গাইডলাইন পেয়েছি। যে যেভাবেই নিক, আমার অনেক উপকার হয়েছে তাঁদের লেখা পড়ে।
এরকম বহু পজিটিভ উপকার আমি পেয়েছি সোস্যাল মিডিয়া থেকে। সোস্যাল মিডিয়ায় খারাপ-ভালো সব আছে। বিষয় হচ্ছে আপনি কোনটা নিবেন।
কিছু ভয়ের বিষয় স্মরণ করিয়ে দিই। নতুন নতুন অনেক ফ্রেন্ড হবে চাকরির প্রস্তুতির সময়ে। কেউ এর মধ্যে মনের মানুষ পেয়েও যেতে পারেন। এতে অসুবিধা নেই। কিন্তু এই মূল্যবান সময়টা যাতে শূণ্যে ঢিল ছুড়তে ব্যয় না হয়। সবকিছু আসবে জীবনে। সুতরাং সময় নষ্ট যাতে না হয়। আর বহু সাড়ে শয়তান হয়তো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েই আছে আশেপাশে। নিজের ভালো নিজে বুঝবেন নিশ্চয়ই।
সবার জন্য শুভকামনা।
জোনায়েদ হোসেন,সহকারী কর কমিশনার